মীরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি ::
চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে হার্নিয়া অপারেশনের সময় শেফা ইনসান হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামে একটি প্রাইভেট হাসপাতালে সাফায়েত (০৫) নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। অপারেশন টেবিলে শিশুর মৃত্যু নিশ্চিত হয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কৌশলে উন্নত চিকিৎসার নামে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে।
কিন্তু সাফায়াত শেফা ইনসান হাসপালের অপারেশন টেবিলেই মারা যায় বলে জানান চমেকের দায়িত্বরত চিকিৎসক। নিহত শিশু সাফায়াতের পরিবার চট্টগ্রাম থেকে ফিরে সেফা ইনসান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসার অভিযোগ তুললে তারা বিষয়টি অস্বীকার করেন। পরে অবস্থা বেগতিক দেখে স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাদের আশ্রয় নিয়ে বিষয়টি সমঝোতার চেষ্টা করেন। বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে উপজেলার বারইয়ারহাটে শিশু ডাক্তার এস এ ফারুকের মালিকানাধীন শেফা ইনসান হাসপাতালে এই মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
নিহত শিশু সাফায়েত উপজেলার ৬ নং ইছাখালী ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ড লুদ্দাখালি এলাকার শহিদুল্লাহর ছেলে। অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শিশু সাফায়াতের পরিবারকে রাত তিনটা পর্যন্ত আটকে রেখে ৩ লাখ টাকা আর্থিক ক্ষতিপূরণ নিতে বাধ্য করে। সকাল হতেই তাড়াহুড়ো করে সাফায়াতের মরদেহ দাফনেও বাধ্য করে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। নিহত শিশুর বাবা শহিদুল্লাহ জানান, ডাক্তারের অনুমতি নিয়ে আমাদের ছেলেকে অপারেশনের ৪ ঘন্টা আগে ছোট একটা জুস থেকে সামান্য জুস খাইয়েছি। অপারেশনের জন্য বাচ্চাকে তিন-চার ঘন্টা পর্যন্ত কোন খাবার খাওয়ায় নাই। বাচ্চাকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়ার ৫ মিনিটের মাথায় ডাক্তাররা ছুটাছুটি করলে আমাদের সন্দেহ হয়।
তখন ডাক্তারদের কাছে আমার বাচ্চার কি হয়েছে জানতে চাইলে তারা আমাদেরকে বিস্তারিত কিছু না জানিয়ে বাচ্চাকে চট্টগ্রাম নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দে। চট্টগ্রামে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা জানায় অপারেশনের সময় শিশুর মৃত্যু হয়েছে। নিহত শিশু সাফায়েত অপারেশনের দায়িত্বরত ডাক্তার রিগান উদ্দিন জানান, হার্নিয়া একটি অত্যন্ত সহজ অপারেশন। অপারেশনটি সমাপ্ত করতে আমার মাত্র ১০ মিনিট লেগেছে। অপারেশন শেষে যখন সেলাই করতেছি তখন দেখা যায় শিশুর শরীর নীল আবরণ ধারণ করতেছে এবং নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে শিশুর কার্ডিয়ার্ক অ্যাটাক বা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।
কিন্তু হার্নিয়ার মত ছোটখাটো অপারেশনে মৃত্যুর আশঙ্কা জিরো পার্সেন্ট। আমি মনে করি এখানে অ্যানাস্থেসিয়ার এপ্লাই করার সময় হয়তো ত্রুটি হতে পারে। যার কারণে অপারেশন সফল হওয়ার পরও শিশুটির মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অ্যানাস্থেসিয়ার প্রয়োগকারী সীতাকুণ্ড জেনারেল হাসপাতালের অ্যানাস্থেসিয়ার ডাক্তার জুয়েল জানান, শিশুটির অপারেশনের শেষ দিকে হঠাৎ নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে গেলে মেডিকেল সাইন্স অনুযায়ী আমাদের যাবতীয় করনীয় সম্পন্ন করি। এ সময় শিশুর খাদ্যনালীতে খাবারের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। খাদ্যনালী পরিষ্কার করার পর শিশুর শ্বাস নিঃশ্বাস স্বাভাবিক হলে শিশুকে উন্নতর চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে নেওয়ার জন্য রিকমেন্ডেশন করা হয়।
সেখানে কি হয়েছে আমরা জানিনা। এ বিষয়ে হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এ ফারুকের সাক্ষাতকার নেয়ার জন্য হাসপাতালে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া তার ব্যক্তিগত ফোন নাম্বারে বারবার যোগাযোগ করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। শিশু হত্যার বিষয়ে জানতে চেয়ে জোরারগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ জাহেদ হোসেনকে বারবার ফোন করলে তার ফোনের সংযোগ প্রদান করা সম্ভব হয় নি।